Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
মেলেনি লঞ্চের খোঁজ, পদ্মাপাড়ে আহাজারি
বিস্তারিত

মেলেনি লঞ্চের খোঁজ,
পদ্মাপাড়ে আহাজারি
সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতম ও
ফারহানা মির্জা, বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-08-04 11:41:37 BdST
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে তিন
শতাধিক
যাত্রী নিয়ে পদ্মা নদীতে লঞ্চডুবির
পর দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার
দিকে মাওয়া ঘাটের
কাছাকাছি নদীতে লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার
পর শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।
নিখোঁজদের মধ্যে স্থানীয়
প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ
করেছেন ১২০ জনের স্বজন।
তবে প্রচণ্ড ঢেউ আর তীব্র স্রোতের
মধ্যে ডুবে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় পরেও
লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত হয়নি।
নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনদের
আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পদ্মা তীর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ধার
কাজে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর
নির্দেশ দিলেও তীব্র স্রোত ও
ঢেউয়ের কারণে অভিযান ব্যাহত হয়
বলে উদ্ধারকর্মীরা জানান।
দুর্ঘটনার পরপরই ট্রলার ও স্পিডবোট
নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার
কাজ শুরু করেন। পরে কোস্ট গার্ড,
ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর
উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার
অভিযানে যোগ দেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স
ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক
মাহফুজুর রহমান আকন্দ বিডিনিউজ
টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, তাদের
ডুবুরি দল স্পিড বোট ও
ট্রলারে করে নদীতে তল্লাশি শুরু
করেন। কিন্তু প্রবল স্রোত আর
বাতাসের কারণে তাদের কাজ
কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
দুর্ঘটনার পর সোনার ব্যবহার
করে পানির নিচে লঞ্চটি সনাক্ত
করার চেষ্টা চালানো হলেও
তাতে সফল হননি উদ্ধারকর্মীরা।
রাত ১০টার
দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম
ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর লঞ্চের
অবস্থান সনাক্তে নতুন করে কাজ শুরু হয়
বলে বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও
পরিচালন বিভাগের পরিচালক মো.
জসীম জানান।
তিনি বলেন, এমভি রুস্তমের
নেতৃত্বে ১৫টি নৌযান
নিয়ে লঞ্চের অবস্থান চিহ্নিত করার
কাজ চলছে।
অন্য উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ও
মাওয়ার পথে রয়েছে বলেও
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
লৌহজং থানার ওসি তোফাজ্জল
হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে জানান, সোমবার
বেলা ১১টার
দিকে কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া আসার
সময় নদীর
লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে তীব্র
স্রোতের মধ্যে ডুবে যায় এমএল
পিনাক-৬ নামে লঞ্চটি। লঞ্চের
ধারণ ক্ষমতা ১২০ থেকে ১৫০ জনের
মতো থাকলেও তাতে প্রায় ৩৫০
যাত্রী ছিলেন।
দুর্ঘটনার পর মাওয়া ঘাট ও
আশপাশে থাকা স্পিড
বোটগুলো ঘটনাস্থলে গিয়ে নদীতে ঝাপিয়ে পড়া শতাধিক
যাত্রীকে উদ্ধার করে।
ওসি তোফাজ্জল জানান, এ সময় ১১০
জনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে দুই
নারী মারা গেছেন।
নিহত নূসরাত জাহান হীরা (২০)
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার
কাদিরপুর গ্রামের নূরুল হকের মেয়ে।
তিনি শিকদার মেডিকেল কলেজের
এমবিবিএসের দ্বিতীয় বর্ষের
ছাত্রী ছিলেন। ঈদের
ছুটি শেষে কলেজে ফিরছিলেন
তিনি। অন্যজনের পরিচয়
জানা যায়নি। তবে তার বয়স
আনুমানিক ৫০ বছর।
নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ
পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়ার
ঘোষণা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ
কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে নিহতদের দাফনের
জন্য তাদের প্রত্যেকের
পরিবারকে ২০ হাজার
টাকা করে দেয়ার
ঘোষণা দিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান
বাদল।
লঞ্চডুবির খবর পেয়েই
নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান
মাওয়ায় ছুটে যান। কয়েক
ঘণ্টা অবস্থান করে উদ্ধার
তৎপরতা তদারকি করেন তিনি।
পরে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল
কাদেরও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে উদ্ধার
পাওয়া মিমজাল ইসলাম নামের এক
যাত্রী মাওয়া ঘাটে বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
মাওয়ার
কাছাকাছি এসে লঞ্চটি হঠাৎ
করে কাত হতে যায় এবং অল্প সময়ের
মধ্যে সেটি ডুবে যায়।
আরেক যাত্রী অফজাল হোসেন বলেন,
নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ ছিল। ঢেউয়ের
আঘাতে লঞ্চের
জানালা দিয়ে পানি উঠছিল।
ঢেউয়ের পানি উঠতে উঠতে এক সময়
লঞ্চটি আধা ডুবু হয়ে যায়। এসময়
লঞ্চের যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক
ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা এদিক-
সেদিক ছুটোছুটি শুরু
করলে লঞ্চটি পিছনের দিক
প্রথমে তলিয়ে যায়। এরপর
আস্তে আস্তে লঞ্চটি পদ্মার
বুকে হারিয়ে যায়।
আফজাল মাদারীপুরের দুরাই এলাকার
হায়দার চকিদারের ছেলে।
লঞ্চে তার ছোট ভাই মিজান (১৪),
বোন ইমা (১৮) ও আফরোজা ছিলেন।
এখনো তাদের কোনো সন্ধান
মেলেনি।
ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত
যাত্রী বহনের কারণেই
লঞ্চটি ডুবে গেছে বলে উদ্ধার
পাওয়া আরেক যাত্রী বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন।
লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় তার পাশ
দিয়ে যাচ্ছিল প্রিন্স অব
মেদিনি মণ্ডল নামের একটি লঞ্চ।
এই লঞ্চের যাত্রী রুবেল
মাওয়া ঘাটে সাংবাদিকদের
বলেন, লঞ্চটি ঢেউয়ের
তোড়ে চোখের সামনে ডুবে যায়।
“নিজের লঞ্চে থেকে দেখছিলাম
কিভাবে লঞ্চটি ডুবছিল। এ যেন
টাইটানিকের সেই ডুবে যাওয়ার দৃশ্য।
লঞ্চের পেছনের অংশটি আগে পদ্মার
পানিতে ডুবে যায়।
আস্তে আস্তে পুরো লঞ্চটিই প্রায় ৫/৭
মিনিট সময় নিয়ে ডুবতে থাকে। এ সময়
যাত্রীরা যে যেভাবে পেরেছেন
পদ্মায় লাফিয়ে পড়েছেন।"
লঞ্চডুবির সময় পাশ
দিয়ে যাওয়া একটি ফেরি থেকে
মোবাইল ফোনে এক
ব্যক্তি একটি ভিডিও ধারণ করেন,
যা পরে গণমাধ্যমকর্মীদে


হাতে আসে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়,
মাঝারি আকৃতির দ্বিতল লঞ্চটি এক
দিকে কাত হয়ে যায় এবং কয়েক
সেকেন্ডের মধ্যে প্রবল ঢেউয়ের
মধ্যে তলিয়ে যায়।
ডুবে যাওয়া এই লঞ্চে ফরিদপুরের
সদরপুর উপজেলার সাতরশি গ্রামের
একই পরিবারের সাতজন ছিলেন,
যাদের কোনো খোঁজ
পাওয়া যাচ্ছে না।
এরা হলেন-মো. রুবেল, তার
স্ত্রী শিমু, বড় মেয়ে ফাইজা (৭) ছোট
মেয়ে ফাতেহা (৩), সোবাহান
মাতুব্বর (৩৫), তার স্ত্রী জিয়াসমিন
আক্তার (২৫) ও সন্তান ইভান (৫)।
তাদের
কাছে থাকা চারটি মোবাইলই বন্ধ
রয়েছে বলে তাদের অভিভাবক
মোহাম্মাদ মাতুব্বর ও আলেম
মিয়া জানান।
“লঞ্চে ওঠার সময় কাওড়াকান্দি ঘাট
থেকে বাড়ির লোকজনের
সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছিল ওরা।
তারপর থেকেই মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি,”
বলেন মোহাম্মদ।
পদ্মা পাড়ে কান্নার রোল
মাওয়া স্পিডবোট ঘাটের
কাছে প্রশাসনের অস্থায়ী কন্ট্রোল
রুমে নিখোঁজদের নাম লেখাচ্ছেন
তাদের স্বজনরা। দুর্ঘটনার খবর
শুনে কেউ ছুটে এসেছেন
মাওয়া ঘাটে, কেউ
নিজে তীরে আসতে পারলেও মাঝ
নদীতে হারিয়েছেন স্ত্রী, ছেলে-
মেয়ে, ভাই বা কোনো স্বজনকে।
প্রিয়জনের খোঁজে থাকা এসব
মানুষের কান্নায়
ভারি হয়ে উঠেছে পদ্মা পাড়।
ঈদের দুদিন পর ছোট
ভাইকে নিয়ে বরিশালে মেয়ের
বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার
বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন (৪৯)।
সোমবার পদ্মায়
ডুবে যাওয়া লঞ্চে করেই
কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মাওয়ায়
আসছিলেন তিনি।
স্বামী ও দেবর বাবুল মিয়কে (৩৮)
খুঁজতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন
হেমায়েতের স্ত্রী হনুফা বেগম।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “সকাল
সাড়ে ১০টার দিকে আমার
স্বামী আমাকে ফোন করে জানায়
মাওয়া ঘাটে নামতে আর
আধা ঘন্টা লাগতে পারে। সকাল
সাড়ে ১১টার দিকে টিভিতে লঞ্চ
ডুবির খবর দেখে আমার স্বামীর
মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পাই।
তারপর আমরা মাওয়ায় চলে আসি।
আমার স্বামী ও দেবর কোথায়?
তাদের খুঁজে পাচ্ছি না।”
ঈদের পর পরিবার-পরিজন
নিয়ে আত্মীয়ের বিয়ের
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শরীয়তপুরের
কৃষ্ণনগরে গিয়েছিলেন আলী জব্বার।
ডুবে যাওয়া লঞ্চ পিনাক-৬ এ
পদ্মা পাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জে নিজেদের
বাসায় ফিরতে চেয়েছিলেন
তারা। লঞ্চ ডুবির পর ছেলে আনোয়ার
হোসেন অপু ও তিনি বেঁচে গেলেও
দুই মেয়ে হালিমা ও
তানজিমা আক্তার
এবং স্ত্রী জাহানারা বেগমের
কোনো সন্ধান নেই তার কাছে।
দুপুরে মাওয়া ঘাটের একটি টঙ
দোকানে বসে আহাজরি করছিলেন
বাপ-বেটা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জব্বার বলেন,
“হালিমা এবার
এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। ১৩
তারিখে ওর রেজাল্ট বের হবে।”
লঞ্চ ডুবির ঘটনায়
নিজে বেঁচে গেলেও ১৩ বছরের
মেয়ে মীমকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ
হয়ে পড়েছেন বিউটি বেগম। ঈদ
শেষে ফরিদপুর থেকে ঢাকার
ডেমরার কোনাপাড়ায় নিজেদের
বাসায় ফিরছিলেন তারা।
মাদারীপুরের চর ধলাইল জালালপুর
খালাসিকান্দি গ্রামের
রাশিদা বেগম জানান, বাবার
বাড়িতে ঈদ করে ঢাকায় ফেরার
পথে এ দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি।
লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময়
নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি কলস
ধরে সাঁতার কাটছিলেন।
পরে একটি স্পিডবোট
এসে তাকে উদ্ধার করে।
তার ছেলে নিমজাল হোসেন (১৮) ও
আফজাল হোসেন (১২)
এবং মেয়ে ইমা আক্তার (১৬) ও
ভাগ্নি আফরোজা আক্তার (১৬)
নিখোঁজ রয়েছে।
ইমা ও আফরোজা দুইজনই মতিঝিল
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের
একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।
দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে সমুদ্র
পরিবহন অধিদপ্তর ও নৌ পরিবহন
মন্ত্রণালয় দুটি তদন্ত
কমিটি করেছে বলে জানিয়েছেন
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান।
তিনি জানান, সমুদ্র পরিবহন
অধিদপ্তরের চার সদস্যের তদন্ত
কমিটির নেতৃত্বে আছেন সংস্থার
প্রকৌশলী (শিপ সার্ভেয়ার) নাজমুল
হক। আর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত
সদস্যের কমিটির প্রধান
করা হয়েছে যুগ্ম সচিব নূরুর রহমানকে।
এর আগে গত ৩১ জুলাই সিরাজগঞ্জের
চৌহালী উপজেলায়
যমুনা নদীতে নৌকাডুবে আট জনের
মৃত্যু হয়। তার দুই দিন আগেই কুষ্টিয়ায়
পদ্মা নদীতে নৌভ্রমণে গিয়ে দুর্ঘটনায়
প্রাণ যায় ১১ জনের।
এছাড়া গত ১৫ মে মুন্সীগঞ্জের
গজারিয়ার দৌলতপুরের
কাছে মেঘনা নদীতে ঝড়ের
কবলে পড়ে এমভি মিরাজ-৪
নামে একটি লঞ্চ ডুবে যায়। ওই ঘটনায়
নদী থেকে মোট ৫৮ জনের লাশ উদ্ধার
করা হয়।
ছবি
ডাউনলোড